অনেক ছাত্র-ছাত্রী ছোটবেলা থেকেই শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন দেখে। এই শিক্ষকতার সর্বোচ্চ পর্যায় হলো “প্রফেসর (Professor)” হওয়া। আজকের প্রতিযোগিতামূলক দুনিয়ায় একজন প্রফেসর হওয়া যেমন গর্বের, তেমনি দায়িত্বপূর্ণ এবং এক ধরনের গবেষণাভিত্তিক (Research Oriented) ক্যারিয়ার।
শুধুমাত্র পড়ানোই নয়, একটি নতুন প্রজন্ম গঠনের অন্যতম কারিগর হলেন একজন প্রফেসর। এই আর্টিকেলে আমরা জানব কীভাবে ধাপে ধাপে একজন প্রফেসর হওয়া যায়, কি কি যোগ্যতা দরকার, খরচ কত হতে পারে, এবং ভবিষ্যৎ কীভাবে গড়ে তোলা যায়।
Cpllege/ University Professor: কীভাবে একজন প্রফেসর হওয়া যায়? সম্পূর্ণ গাইড
প্রফেসর হলেন উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একজন শিক্ষিকা বা গবেষক যিনি কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ান। কেউ মূলত লেকচার দিয়ে ছাত্রদের পড়ান, কেউ গবেষণায় (research) নিয়োজিত থাকেন, আবার কেউ বিশেষ কোনো একাডেমিক প্রজেক্ট বা উন্নয়নমূলক কাজে অংশ নেন। অনেকেই একসাথে লেকচার, রিসার্চ ও গাইডেন্সের কাজ করে থাকেন।
শিক্ষাগত যোগ্যতা ও প্রয়োজনীয় ধাপসমূহ (Educational Qualification)
বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজে প্রফেসর (Professor) হতে গেলে আপনাকে নির্দিষ্ট কিছু ধাপ অনুসরণ করতে হবে। নিচে ধাপে ধাপে ব্যাখ্যা করা হলো:
- মাধ্যমিক (Madhyamik) ও উচ্চ মাধ্যমিক (Higher Secondary):
– ভালো রেজাল্ট করতে হবে।
– সাধারণত আর্টস, সায়েন্স বা কমার্স যেকোনো স্ট্রিমে পড়া যেতে পারে, তবে ভবিষ্যৎ বিষয়ে আগ্রহ থাকা দরকার। - স্নাতক (Bachelor’s Degree):
– আপনার আগ্রহ অনুযায়ী বিষয়ে (Subject) B.A, B.Sc, B.Com, বা প্রফেশনাল ক্ষেত্রে B.Tech, MBBS, BBA ইত্যাদি। - স্নাতকোত্তর (Master’s Degree):
– প্রফেসর হতে গেলে অন্তত ৫৫% নম্বর সহ মাস্টার্স ডিগ্রি (Master’s Degree) আবশ্যক। M.A / M.Sc / M.Com / M.Tech / MBA / M.Ed / M.Sc Nursing/ MD ইত্যাদি সম্পন্ন করতে হবে। এই ডিগ্রি প্রফেসর হওয়ার জন্য একটি আবশ্যিক ধাপ। - জাতীয় স্তরের পরীক্ষা (Eligibility Test):
– NET (National Eligibility Test) / SET (State Eligibility Test) – এগুলোর মাধ্যমে আপনি কলেজে অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর (Assistant Professor) হতে পারবেন।
পিএইচডি (PhD): গবেষণা ও প্রকাশনা
UGC নিয়ম অনুযায়ী, উচ্চতর পদে প্রফেসর হতে গেলে PhD থাকা বাধ্যতামূলক। গবেষণামূলক উচ্চশিক্ষা ডক্টরেট (Doctor of Philosophy – PhD) সম্পন্ন করলে Assistant Professor পদ থেকে শুরু করে ধাপে ধাপে Associate Professor ও Professor হওয়া যায়।
গবেষণা ও প্রকাশনা: নিয়মিত রিসার্চ পেপার (Research Paper) লেখা, জার্নাল (Journal) এ প্রকাশ, এবং কনফারেন্স (Conference) অংশগ্রহণ একজন প্রফেসরের ক্যারিয়ারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
আগ্রহ (Interest)
- ভালোভাবে পড়ানো এবং জ্ঞানের প্রতি ভালোবাসা থাকা জরুরি।
- গবেষণার (Research) প্রতি আগ্রহ থাকতে হবে।
- লেখালিখি (Academic Writing), পাবলিকেশন (Publication) করার আগ্রহ থাকতে হবে।
- ছাত্রদের সাথে যুক্ত থাকতে চাইলে ধৈর্য, সহানুভূতি ও যোগাযোগের দক্ষতা থাকা প্রয়োজন।
আরো দেখো: আইআইটি (IIT) কীভাবে ভর্তি হবে? যোগ্যতা, পরীক্ষা UG/PG/Phd রিসার্চ সমস্ত বিষয়! জেনে নাও
বিভিন্ন স্ট্রিম অনুযায়ী প্রফেসর হওয়ার পথ (টেবিল আকারে)
আমাদের সাধারণ কলেজ ইউনিভারসিটির পাশাপাশি সমস্ত প্রফেশনাল টেকনিক্যাল মেডিকেল জায়গাতে উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে প্রফেসর বা লেকচারার থাকেন, তবে সেই বিশেষ ক্ষেত্রে তারা কাজ করার পাশাপাশি ও কলেজ ইউনিভার্সিটি এর শিক্ষাদান করে থাকেন –
স্ট্রিম | প্রয়োজনীয় শিক্ষাগত যোগ্যতা | প্রফেসর হওয়ার পদ্ধতি |
---|---|---|
চিরাচরিত (General Academic) | B.A/B.Sc/B.Com → M.A/M.Sc/M.Com → NET/SET → PhD | কলেজ/বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনায় প্রবেশ |
ইঞ্জিনিয়ারিং (Engineering) | B.Tech/B.E → M.Tech → PhD | AICTE অনুমোদিত কলেজে পড়ানো |
মেডিকেল ও প্যারামেডিকেল | MBBS → MD/MS অথবা B.Sc → M.Sc → গবেষণা | মেডিকেল কলেজে বিষয়ভিত্তিক অধ্যাপনা |
নার্সিং | B.Sc Nursing → M.Sc Nursing → গবেষণা ও অভিজ্ঞতা | নার্সিং কলেজে শিক্ষকতা |
ম্যানেজমেন্ট ও বিজনেস | BBA → MBA → গবেষণা → PhD | ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউটে অধ্যাপনা |
আইনি শিক্ষা (Law) | LLB → LLM → গবেষণা/PhD | আইন কলেজে অধ্যাপনা |
অন্যান্য (যেমন ফার্মেসি, এগ্রিকালচার, হোটেল ম্যানেজমেন্ট) | সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ডিগ্রি → উচ্চতর ডিগ্রি → গবেষণা | সংশ্লিষ্ট ইনস্টিটিউটে অধ্যাপনা |
** আপনি যে কোন ক্ষেত্রে প্রফেসর হিসেবে নিযুক্ত হতে পারেন, শুধুমাত্র সেখানের মাস্টার ডিগ্রি এবং পিএইচডি রিসার্চ করতে হবে।
খরচ কেমন হয়? স্কলারশিপ সুবিধা (Fees, Scholarship, Stipend)
প্রফেসর হওয়ার পথে অনেকেই মনে করেন প্রচুর খরচ হয়, কিন্তু বাস্তবে মাধ্যমিকের পর থেকেই বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি স্তরে স্কলারশিপ (Scholarship) পাওয়া যায়। বিশেষ করে মাস্টার্স ও PhD স্তরে ফেলোশিপ (Fellowship) ও Teaching অ্যাসিস্ট্যান্স পাওয়া যায়।
যার ফলে পড়াশোনার কোনও খরচ প্রায় থাকে না, বরং অনেক ক্ষেত্রে মাসিক স্টাইপেন্ড (Stipend) পেয়ে সেভিংস পর্যন্ত করা যায়। এই আর্থিক স্বাধীনতা ছাত্র-ছাত্রীদের আরও মোটিভেট করে গবেষণামুখী ক্যারিয়ার গড়তে।
পথ | আনুমানিক খরচ |
---|---|
গ্র্যাজুয়েশন | 30,000-80,000 টাকা/বছর (স্কলারশিপে বিনামূল্যেও হতে পারে) |
মাস্টার্স | 40,000-1,20,000 টাকা/বছর (ফেলোশিপে বিনামূল্যেও হতে পারে) |
PhD | 50,000-2,00,000 টাকা/বছর (UGC-NET JRF বা অন্যান্য স্টাইপেন্ডে পুরো খরচ কভার হয়) |
আরো দেখবেন: After HS Entrance Exams: উচ্চ মাধ্যমিকের পরে প্রবেশিকা পরীক্ষা, Science/Arts/Commerce সমস্ত দেখে নিন!
একজন প্রফেসর হওয়া মানে শুধু একটি চাকরি নয়, বরং একটি মিশন। আপনি যত ভালো শিক্ষক হবেন, তত ছাত্র-ছাত্রী আপনার চিন্তাধারা বহন করবে। আজকের দিনে শুধু পড়াশোনা নয়, গবেষণা, অনুপ্রেরণা ও নেতৃত্ব — এই সব গুণ মিলেই তৈরি হয় একজন সফল প্রফেসর। তাহলে আজ থেকেই নিজেকে প্রস্তুত করুন।
আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ ও টেলিগ্রাম গ্রুপে যুক্ত হোন -
আরও আপডেট »