রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কালজয়ী কবিতা“প্রার্থনা”, উচ্চমাধ্যমিক (HS 4th Semester) চতুর্থ সেমিস্টারের বাংলা পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। পরীক্ষার নতুন প্যাটার্ন অনুযায়ী, এখান থেকে দুই নাম্বার এবং তিন নাম্বারের প্রশ্ন আসবে। আজকের ক্লাস এবং নোটটি পরীক্ষাকেন্দ্রিক হওয়ার পাশাপাশি সম্পূর্ণ কবিতাটি খুব ভালো করে পড়া হবে।
‘প্রার্থনা’ কবিতা | Prarthona Kobita by Rabindranath Tagore
কবি এখানে স্বাধীনতা, মানবিক মূল্যবোধ, জ্ঞান, যুক্তি, ঐক্য ও সত্যের এক স্বপ্নরাজ্যের কথা বলেছেন।
বিশেষ করে আধুনিক শিক্ষার্থীদের জন্য কবিতাটির তাৎপর্য গভীর, কারণ এটি আমাদের শেখায়— কুসংস্কার, ভয় ও সংকীর্ণতার বাইরে গিয়ে জ্ঞান, যুক্তি ও কর্মের মাধ্যমে গড়ে তুলতে হবে এক উন্নত সমাজ।
কবি পরিচিতি: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর – বিশ্বকবির ব্যাপারে আলাদা করে বলার প্রয়োজন পড়ে না। তবুও তোমাদের জন্য সংক্ষিপ্ত কিছু তথ্য – (৯ই মে, ১৮৬১ – ৭ই আগস্ট, ১৯৪১) জন্ম কলকাতার জোড়াসাঁকোর বিখ্যাত ঠাকুর পরিবারে, পিতা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর, মাতা সারদা দেবী। ১৯১৩ সালে ‘গীতাঞ্জলি’ (Song Offerings) এর জন্য সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান।
প্রার্থনা – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ( কবিতা উৎস এবং তথ্য)
কবিতাটি চতুর্দশপদী এবং উৎস – ‘নৈবেদ্য’ কাব্যগ্রন্থের ৭২ সংখ্যক কবিতা।
চিত্ত যেথা ভয়শূন্য, উচ্চ যেথা শির,
জ্ঞান যেথা মুক্ত, যেথা গৃহের প্রাচীর
আপন প্রাঙ্গণতলে দিবসশর্বরী
বসুধারে রাখে নাই খণ্ড ক্ষুদ্র করি,
যেথা বাক্য হৃদয়ের উৎসমুখ হতে
উচ্ছ্বসিয়া উঠে, যেথা নির্বারিত স্রোতে
দেশে দেশে দিশে দিশে কর্মধারা ধায়
অজস্র সহস্রবিধ চরিতার্থতায়-
যেথা তুচ্ছ আচারের মরুবালুরাশি
বিচারের স্রোতঃপথ ফেলে নাই গ্রাসি,
পৌরুষেরে করে নি শতধা; নিত্য যেথা
তুমি সর্ব কর্ম চিন্তা আনন্দের নেতা-
নিজ হস্তে নির্দয় আঘাত করি, পিতঃ,
ভারতেরে সেই স্বর্গে করো জাগরিত।
লাইন ধরে অর্থ এবং ব্যাখ্যা (পরীক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ)
এরপর আমরা এই কবিতাটির লাইন ধরে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করব। পরীক্ষার জন্য প্রত্যেকটি লাইন খুব ভালো করে তার ভেতরের মানে বুঝতে হবে। তাহলে পরীক্ষাতে যেই প্রশ্ন আসুক তোমরা কিন্তু করতে পারবে। আর দুই নম্বর তিন নম্বর যে প্রশ্নগুলো সেগুলো কিন্তু সরাসরি এরকম লাইন তুলে তার শব্দার্থ বা তাৎপর্য জানতে চাওয়া হবে।
১) “চিত্ত যেথা ভয়শূন্য, উচ্চ যেথা শির,’’
অর্থ: মানুষের মন যেন ভয়মুক্ত হয়, আর প্রত্যেকের মাথা যেন গৌরব ও মর্যাদায় উঁচু হয়।
🔹 ব্যাখ্যা: সমাজে এমন পরিবেশ হোক যেখানে মানুষ ভয় না পেয়ে সত্য কথা বলতে পারে, ন্যায়ের পথে চলতে পারে। মাথা উঁচু করে বাঁচার সুযোগই সত্যিকারের স্বাধীনতা।
২) “জ্ঞান যেথা মুক্ত, যেথা গৃহের প্রাচীর’’ **
অর্থ: জ্ঞান যেন সবার জন্য উন্মুক্ত থাকে, সংকীর্ণ গণ্ডিতে আটকে না যায়।
🔹 ব্যাখ্যা: মানুষ যেন পরিবার বা ছোট সমাজের সীমানায় সীমাবদ্ধ না থেকে গোটা পৃথিবীকে নিজের করে ভাবতে পারে। ছোট ছোট বিভাজন যেন জ্ঞানকে আটকাতে না পারে।
৩) “আপন প্রাঙ্গণতলে দিবসশর্বরী / বসুধারে রাখে নাই খণ্ড ক্ষুদ্র করি’’
- আপন প্রাঙ্গণতলে → নিজের ঘরের আঙিনায় / ছোট গণ্ডির মধ্যে
- দিবসশর্বরী → দিন-রাত, অর্থাৎ সর্বক্ষণ
- বসুধা → পৃথিবী
- খণ্ড ক্ষুদ্র → টুকরো টুকরো, সংকীর্ণ, ছোট ছোট ভাগে বিভক্ত
অর্থ: মানুষ যেন নিজের ছোট গণ্ডির আঙিনায় দিন-রাত বসে থেকে গোটা পৃথিবীকে খণ্ড খণ্ড ছোট করে না দেখে।
ব্যাখ্যা: কবি বোঝাতে চাইছেন— আমরা যেন শুধু নিজের পরিবার, সমাজ বা ছোট অঞ্চলের কথা ভেবে না থাকি। পৃথিবীকে ভাগ করে সংকীর্ণ করে দেখলে জ্ঞানের সত্যিকার মুক্তি হয় না। মানুষের মন যেন সর্বদা উদার হয়, সীমার মধ্যে আবদ্ধ না থেকে সারাবিশ্বকে নিজের করে চিনতে শেখে।
সহজভাবে বলতে গেলে: “মানুষ যেন নিজের আঙিনা ছেড়ে বেরিয়ে সমগ্র পৃথিবীকে আপন করে দেখে, সংকীর্ণতার মধ্যে আটকে না যায়।”
৪) “যেথা বাক্য হৃদয়ের উৎসমুখ হতে/ উচ্ছ্বসিয়া উঠে,’’ **
অর্থ: যেখানে কথা মানুষের হৃদয়ের গভীর থেকে উঠে আসে, খাঁটি ও সত্য হয়।
🔹 ব্যাখ্যা: মিথ্যা, ভয় বা ভণ্ডামির কারণে নয় — সত্যিকারের অনুভূতি ও সততার জায়গা থেকে কথা প্রকাশিত হয়।
৫) “যেথা নির্বারিত স্রোতে / দেশে দেশে দিশে দিশে কর্মধারা ধায় /
অজস্র সহস্রবিধ চরিতার্থতায়-’’
অর্থ: যেখানে কাজের ধারা বাধাহীনভাবে দেশ থেকে দেশে, দিক থেকে দিকে প্রবাহিত হয়, আর তা সফলতা ও উন্নতিতে ভরে ওঠে।
🔹 ব্যাখ্যা: মানুষ যেন অবাধে কাজ করতে পারে, উন্নতির পথে এগোতে পারে। কর্মপ্রবাহ যেন থেমে না থাকে, সীমাহীন ও মুক্ত হয়।
৬) “যেথা তুচ্ছ আচারের মরুবালুরাশি/ বিচারের স্রোতঃপথ ফেলে নাই গ্রাসি,’’
অর্থ: যেখানে অযথা কুসংস্কার ও তুচ্ছ রীতি-নীতির মরুভূমি সত্যিকারের যুক্তি ও বিবেককে গ্রাস করে না।
🔹 ব্যাখ্যা: সমাজে যেন অন্ধ বিশ্বাস বা ফালতু রীতিনীতি বিচারশক্তিকে ধ্বংস না করে। সত্যিকারের প্রগতির জন্য মুক্ত চিন্তার পরিবেশ দরকার।
৭) “পৌরুষেরে করে নি শতধা;’’
- পৌরুষ → শক্তি, সাহস, কর্মক্ষমতা, পুরুষোচিত গৌরব
- শতধা → শত টুকরো, ভাঙাচোরা, বিভক্ত
অর্থ: যেখানে মানুষের শক্তি ও সামর্থ্য টুকরো টুকরো হয়ে দুর্বল হয়নি, ভেঙে যায়নি।
🔹 ব্যাখ্যা: ঐক্যবদ্ধ শক্তিই দেশের উন্নতির মূল। ছোটখাটো বিভাজন বা সংকীর্ণতা যেন মানুষের শক্তিকে দুর্বল না করে।
৮) “নিত্য যেথা তুমি সর্ব কর্ম চিন্তা আনন্দের নেতা-’’ **
অর্থ: যেখানে প্রতিদিন তুমি (হে ঈশ্বর) কর্ম, চিন্তা ও আনন্দের পথপ্রদর্শক হয়ে থাকো।
🔹 ব্যাখ্যা: মানুষের সমস্ত কাজে, চিন্তায় আর আনন্দে যদি ঈশ্বরের সত্য, ন্যায় ও মহৎ শক্তি নেতৃত্ব দেয়, তবে জীবন সত্যিই অর্থবহ হবে।
৯) “নিজ হস্তে নির্দয় আঘাত করি, পিতঃ, ভারতেরে সেই স্বর্গে করো জাগরিত।’’ **
- নিজ হস্তে — নিজের হাতেই (স্বকীয় কর্তৃত্বে)
- নির্দয় — কঠোর, দয়াহীন, কঠিন প্রহরায় বা কার্যপদ্ধতিতে
- আঘাত করি — আঘাত করা, প্রখর ভাঙচুর করা—এখানে মনস্তাত্ত্বিক/আধ্যাত্মিক অর্থে অবচেতন ভাঙানো
- পিতঃ — পিতা/ঈশ্বরকে সম্বোধন (আত্মিক পিতা বা সৃষ্টিকর্তা)
- ভারতেরে — ভারতকে (দেশকে)
- সেই স্বর্গে — ওই কাঙ্ক্ষিত স্বর্গরাজ্যে (স্বাধীন, ন্যায়বান, জ্ঞান-প্রধান সমাজে)
- করো জাগরিত — জাগ্রত করো, জাগৃত অবস্থায় পৌঁছে দাও
অর্থ: হে পরম পিতা (ঈশ্বর), তুমি তোমার শক্ত হাতে নির্দয় আঘাত করে আমাদের ভুল, দুর্বলতা আর অজ্ঞানতাকে দূর করো এবং ভারতবর্ষকে সেই মুক্ত, সত্য ও ন্যায়ের স্বর্গরাজ্যে জাগিয়ে তোলো।
🔹 ব্যাখ্যা: কবির প্রার্থনা— ভারতের মানুষ যেন অজ্ঞানতা, ভয়, সংকীর্ণতা থেকে মুক্ত হয়ে সত্যিকারের স্বাধীনতা ও উন্নতির স্বর্গে পৌঁছায়।
প্রার্থনা কবিতার অন্তর্নিহিত অর্থ (ভাবার্থ) ও বিষয়বস্তু | উচ্চমাধ্যমিক চতুর্থ সেমিস্টার
ভাবার্থ: চিত্তের নির্ভীকতা, কুসংস্কারমুক্ত জ্ঞান, মনের সহজ আবেগ এবং কাজের মধ্যে আত্মনিয়োেগ ব্যতীত ভারতবাসীর উন্নতি সম্ভব নয়। ঈশ্বর যেন কঠিন আঘাতের দ্বারা ভারতকে সমস্তরকম উন্নতির আদর্শ পুণ্যভূমিতে পরিণত করেন।
বিষয়বস্তু: সমাজ কে এভাবে গড়ে তুলতে হবে যেখানে চিত্ত অর্থাৎ মানুষের মনের অন্তরে কোনো ভয় থাকবে না, সবাই মাথা উঁচু করে বাঁচবে। সমাজের সবার জন্য জ্ঞান হবে উন্মুক্ত। যেখানে ধনী দরিদ্রের মধ্যে প্রাচীর থাকবে না, যেখানে সর্বদা সত্য উন্মোচিত হবে, সেখানেই আসবে স্বাধীনতা। ভারতবর্ষের সেই কাঙ্খিত স্বাধীনতাকে কল্পনা করে তিনি লিখেছেন, যে দেশ সেদিন স্বাধীন হবে যেদিন দেশের মানুষের কর্মধারা সব রাজনৈতিক বাধাকে কে লঙ্ঘন করে ছড়িয়ে পড়বে সারা পৃথিবীতে। স্বাধীনতা তখনই আসবে যখন যুক্তি ও জ্ঞান দিয়ে মানুষ কুসংস্কারকে পরাস্ত করবে। কবি তার কবিতায় ভারতবর্ষকে এমনই এক স্বর্গ রাজ্যের রূপে দেখতে চেয়েছেন।
প্রার্থনা কবিতার প্রশ্ন উত্তর (Prarthana Kobita Question Answer) 2+3 MARKS
পরীক্ষা এখান থেকে দুই নম্বরের একটি এবং তিন নম্বারের একটি প্রশ্ন আসবে অর্থাৎ সর্বমোট ৫ নম্বরের – তাই তোমাদেরকে সবটাই ভালোভাবে করে যেতে হবে।
প্রশ্ন: ‘প্রার্থনা’ কবিতায় কবি কীভাবে ভারতবর্ষকে স্বর্গে জাগরিত করার কথা বলেছেন, তা নিজের ভাষায় আলোচনা কর। (সংসদ নমুনা প্রশ্ন) ★★
★★ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের “প্রার্থনা” কবিতা প্রশ্নে জানতে চাওয়া হয়েছে— কবি ভারতের জন্য এক মহান প্রার্থনা করেছেন। তিনি স্বপ্ন দেখেছেন এমন এক দেশের, যেখানে মানুষের চিত্ত হবে ভয়শূন্য আর মাথা থাকবে গৌরবময়, জ্ঞান থাকবে মুক্ত, কোন সংকীর্ণতার গণ্ডিতে আবদ্ধ থাকবে না।
মানুষ কেবল নিজের ঘর বা প্রাঙ্গণেই সীমাবদ্ধ না থেকে, সমগ্র পৃথিবীকে আপন করে দেখবে। মানুষের কথা আসবে অন্তরের গভীর থেকে, সত্য ও আন্তরিকতায় ভরা থাকবে। কাজের ধারা হবে অবাধ ও প্রবহমান, যা দেশ থেকে দেশে ছড়িয়ে দেবে উন্নতি ও সফলতা।
সমাজে কুসংস্কার, অযথা আচারের বোঝা কিংবা সংকীর্ণতার মরুভূমি যেন যুক্তি ও বিবেককে গ্রাস করতে না পারে। মানুষের শক্তি যেন বিভক্ত না হয়ে ঐক্যবদ্ধ থেকে দেশের উন্নতি সাধন করে। আর সর্বোপরি, প্রতিটি কর্ম, চিন্তা ও আনন্দে যেন ঈশ্বর নেতৃত্ব দেন।
শেষে কবি ঈশ্বরকে প্রার্থনা করেছেন—
“নিজ হস্তে নির্দয় আঘাত করি, পিতঃ,
ভারতেরে সেই স্বর্গে করো জাগরিত।”
যেন ভারতবর্ষকে সব দুর্বলতা, অজ্ঞানতা, ভয় ও সংকীর্ণতা থেকে মুক্ত করা হয় এবং এই দেশকে সত্য, জ্ঞান ও ন্যায়ের স্বর্গরাজ্যে জাগ্রত করা হয়।
কবি চান ভারতবর্ষ যেন শুধু ভৌগোলিক অর্থে নয়, মানসিক ও নৈতিক দিক থেকেও মুক্ত, প্রগতিশীল ও উদারচেতনার দেশ হয়ে ওঠে। সত্য, জ্ঞান, কর্ম, ঐক্য ও ঈশ্বর-নেতৃত্বই সেই স্বর্গরাজ্যের ভিত্তি।
প্রশ্ন: প্রার্থনা কবিতার নামকরণের তাৎপর্য/ শিরোনামের যথার্থতা আলোচনা কর। ★★
★★★ “প্রার্থনা” কবিতাটির নামকরণের মধ্যে গভীর তাৎপর্য রয়েছে। ‘প্রার্থনা’ শব্দটি কবিতার মূল ভাবকে এক কথায় প্রকাশ করেছে। এটি কোনো বর্ণনা নয়, কোনো আখ্যান নয়, বরং সরল হৃদয়ের গভীর আবেদন।
- প্রার্থনার ভঙ্গি:
কবিতার প্রতিটি লাইনেই কবি যেন ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করছেন— ভারতের মানুষ যেন ভয়, সংকীর্ণতা ও কুসংস্কার থেকে মুক্ত হয়। তাই কবিতাটি কেবল ভাবপ্রকাশ নয়, প্রকৃত অর্থেই এক মঙ্গলকামনার প্রার্থনা। - দেশপ্রেমের প্রার্থনা:
এটি ব্যক্তিগত কোনো কামনা নয়। কবি মাতৃভূমি ভারতের সার্বিক মঙ্গল ও উন্নতির জন্য ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করেছেন। এ দিক থেকে এটি দেশপ্রেমিক প্রার্থনা। - স্বর্গরাজ্যের আকাঙ্ক্ষা:
কবি এমন এক দেশের স্বপ্ন দেখিয়েছেন, যেখানে সত্য, জ্ঞান, যুক্তি, কর্ম ও ঐক্য বিরাজ করবে। এ স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য ঈশ্বরের করুণাই একমাত্র ভরসা— তাই প্রার্থনা রূপে প্রকাশ।
রবীন্দ্রনাথের এই কবিতা আসলে ভারতের আত্মিক মুক্তির জন্য এক চিরন্তন আর্তি। তাই কবিতাটিকে “প্রার্থনা” নামে অভিহিত করা অত্যন্ত সার্থক, কারণ নামের মধ্যেই কবিতার মূল সুরটি ধ্বনিত হয়েছে।
প্রশ্ন: ‘প্রার্থনা’ কবিতার উৎস লিখে এই কবিতায় কবির কোন মানসিকতার প্রকাশ ঘটেছে আলোচনা করো। ★★
★ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘নৈবেদ্য’ কাব্যগ্রন্থ থেকে “প্রার্থনা” কবিতাটি সংগৃহীত।
★★ এই কবিতায় রবীন্দ্রনাথ তাঁর দেশপ্রেমিক ও মানবতাবাদী মানসিকতা প্রকাশ করেছেন।
- ভয়মুক্ত চেতনা:
কবি চান, দেশের মানুষ যেন ভয়শূন্য চিত্ত নিয়ে মাথা উঁচু করে বাঁচতে পারে। - মুক্ত জ্ঞান ও উদারতা:
তিনি সংকীর্ণতার বিরুদ্ধে। কবি চান জ্ঞানের আলো সবার জন্য উন্মুক্ত হোক, ক্ষুদ্র গণ্ডির ভেতর সীমাবদ্ধ না থাকুক। - সততা ও সত্যের মূল্যবোধ:
মানুষের বাক্য যেন অন্তরের গভীর থেকে উঠে আসে, মিথ্যা বা ভণ্ডামির আশ্রয় না নেয়। - অবাধ কর্মধারা:
কর্মের ধারা যেন বাধাহীনভাবে প্রবাহিত হয় এবং সমাজে উন্নতি ও সফলতা নিয়ে আসে। - কুসংস্কার ও সংকীর্ণতার বিরোধিতা:
কবি কুসংস্কার, অযথা আচারের বিরুদ্ধে যুক্তি ও বিবেককে জাগ্রত করার আহ্বান জানিয়েছেন। - ঈশ্বরবিশ্বাস:
সর্বশেষে কবি ঈশ্বরকে ‘সর্ব কর্ম চিন্তা আনন্দের নেতা’ হিসেবে মেনে নিয়ে প্রার্থনা করেছেন, যেন তিনি কঠোরভাবে জাতির ভেতরের ভ্রান্তি ভেঙে দিয়ে ভারতবর্ষকে মুক্তি ও জ্ঞানের স্বর্গরাজ্যে জাগ্রত করেন।
এই কবিতায় রবীন্দ্রনাথের আদর্শবাদী, প্রগতিশীল ও দেশপ্রেমিক মানসিকতার প্রকাশ ঘটেছে। তিনি এক মুক্তচিন্তার, ন্যায়নিষ্ঠ, ঐক্যবদ্ধ ও জ্ঞানসমৃদ্ধ ভারতের স্বপ্ন দেখেছেন। তাই কবিতাটি শুধু প্রার্থনা নয়, বরং জাতির জন্য এক কালজয়ী দিশারী।
প্রশ্ন: ‘প্রার্থনা’ কবিতায় কবি কাকে এবং কেন ‘সর্ব কর্ম চিন্তা আনন্দের নেতা’ বলেছেন ? ★
★ উদ্ধৃতাংশে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর “প্রার্থনা” কবিতায় ঈশ্বর বা পরম ব্রহ্ম আলোকসত্তাকে উদ্দেশ্য করে বলছেন।
★★ তিনি চেয়েছেন যে তার কর্ম, চিন্তা, এবং মন সবই সত্য, সুন্দর ও আনন্দময় হোক। এই প্রার্থনায় তিনি ঈশ্বরকে “সর্ব কর্ম চিন্তা আনন্দের নেতা” বলেছেন।
- সকল কাজের পথপ্রদর্শক: ঈশ্বরই মানুষকে সঠিক পথে পরিচালিত করে। তাই যে কাজ আমরা করি, সেটি যদি আনন্দ ও সত্যে ভরা হয়, তার পেছনে ঈশ্বরের দিকনির্দেশনা আছে।
- চিন্তাভাবনায় নেতৃত্ব: আমাদের মন ও চিন্তা যদি সঠিকভাবে পরিচালিত হয়, সেক্ষেত্রে ঈশ্বরই সেই চিন্তার নেতা।
- আনন্দের উৎস: প্রকৃত আনন্দ, নিঃস্বার্থ এবং শান্তিময় জীবন, ঈশ্বরের দিকনির্দেশনা ছাড়া সম্ভব নয়। তাই তাকে বলা হয়েছে “আনন্দের নেতা”।
সংক্ষেপে বলতে গেলে, কবি ঈশ্বরকে সমস্ত কর্মকাণ্ড, চিন্তা ও আনন্দের সর্বোচ্চ নেতা বা নায়ক হিসেবে দেখেছেন, যিনি মানুষের জীবনে সঠিকতা, সৌন্দর্য ও আনন্দ নিয়ে আসেন।
উচ্চমাধ্যমিক Class 12 4th সেমিস্টার প্রস্তুতির জন্য অবশ্যই আমাদের “টার্গেট” whatsapp গ্রুপ জয়েন করতে পারো: Join Group →
বিষয়ভিত্তিক অধ্যায়ভিত্তিক পড়াশোনা এবং নোটের জন্য EduTips অ্যাপ অবশ্যই ইন্সটল করে নাও –
পরবর্তী ক্লাসে আমরা অন্য একটি কবিতা বা অধ্যায় নিয়ে আলোচনা করব এবং সেগুলি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নেব। অবশ্যই নিজের বন্ধুদের সাথে শেয়ার করে দাও, প্রথম থেকে সবাই মিলে খুব ভালো করে পড়াশোনা করো।
আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ ও টেলিগ্রাম Study গ্রুপে যুক্ত হোন -