স্কুলের টেস্ট পরীক্ষা, মাধ্যমিক বোর্ড পরীক্ষা কিংবা উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা – বিজ্ঞান বিষয়ক একটি রচনা প্রায়শই আসতে দেখা যায়। তার মধ্যে “বিজ্ঞান আশীর্বাদ না অভিশাপ”, “বিজ্ঞানের ভালো মন্দ” “বিজ্ঞান বনাম মানব জীবন” এই ধরনের রচনা প্রায়ই এসে থাকে।
এটি বহুল প্রচলিত একটি কমন রচনা হলেও দীর্ঘদিন ধরে সেই একই কনটেন্ট ছাত্রছাত্রীরা পেয়ে আসছে বিভিন্ন সহায়িকা বই থেকে, তাই আমাদের তরফ থেকে একটু নতুনত্ব আনা হলো এই প্রবন্ধ রচনাতে। আশা করি ছাত্রছাত্রীরা নতুন অনেক তথ্য, লেখা স্টাইল পাবে এবং যেটা তাদের পরীক্ষার প্রস্তুতিকে সমৃদ্ধ করবে।
বিজ্ঞান আশীর্বাদ না অভিশাপ? – মানস মানচিত্র অবলম্বনে প্রবন্ধ রচনা
অবতরণিকা:
“Now I am become Death, the destroyer of worlds,”
"আমি মৃত্যু, জগতের ধ্বংসকারী।" – জে. রবার্ট ওপেনহাইমার (শ্রীমদ্ভাগবত গীতা উক্তি থেকে উদ্বুদ্ধ), প্রথম পারমাণবিক বিস্ফোরণের পর।এই উক্তিটি শুধুমাত্র একজন পদার্থবিদের ব্যক্তিগত অনুশোচনা নয়, এটি আধুনিক বিজ্ঞানের দ্বৈত সত্তার এক চরম দার্শনিক স্বীকারোক্তি। যে মানবমন অসীমের অনুসন্ধানে লিপ্ত, অদেখা রহস্যের জট খুলে চলেছে নিরন্তর, সেই মনই যখন পারমাণবিক বিভাজনের মতো বিধ্বংসী শক্তিকে উন্মোচন করে, তখন প্রশ্ন জাগে: এ কোন অমৃতের সন্ধান, যার আড়ালে লুকিয়ে আছে মারণ বিষ?
সৃষ্টির আদিম কৌতূহল থেকে যাত্রা শুরু করে আজকের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) ও জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং-এর যুগ পর্যন্ত, বিজ্ঞান মানবজাতির জন্য এক ‘শ্যাম-শুভ্র’ আলো নিয়ে এসেছে। এই আলো কখনো রোগমুক্তির আশ্বাস দেয়, আবার কখনো ধ্বংসের বিভীষিকা। বিজ্ঞান কি তবে নিছকই একটি নিরপেক্ষ হাতিয়ার, নাকি এর অন্তর্নিহিত শক্তি মানবজাতির ভাগ্যলিপিতে আশীর্বাদ ও অভিশাপের জটিল সমীকরণ এঁকে দিয়েছে?
১. জ্ঞানালোকের উন্মোচন: যুক্তিবাদের জয়যাত্রা – (আশীর্বাদ পক্ষ)
বিজ্ঞানের শ্রেষ্ঠ অবদান হলো যুক্তিনির্ভর মনন ও কুসংস্কারের শৃঙ্খল মুক্তি। গ্যালিলিওর দূরবীন থেকে আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতার তত্ত্ব পর্যন্ত—বিজ্ঞান আমাদের মহাবিশ্বের সত্যিকারের স্বরূপ দেখিয়েছে। এটি কেবল বস্তুগত উন্নতি নয়, বরং মনুষ্যত্বের স্বাধীনতা ও জিজ্ঞাসাকে প্রতিষ্ঠা করেছে।
চিকিৎসা বিজ্ঞান (ভ্যাকসিন, অ্যান্টিবায়োটিক), প্রযুক্তির বিকাশ (ইন্টারনেট, যোগাযোগ) এবং মহাকাশ গবেষণার মাধ্যমে মানুষ নিজের সীমা অতিক্রম করেছে।
২. জীবনরক্ষক বিজ্ঞান: Science as a Saviour – (আশীর্বাদ পক্ষ)
চিকিৎসা ও কৃষি ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের অবদান জীবনের মৌলিক ভিত্তিগুলিকে মজবুত করেছে। ‘সবুজ বিপ্লব’ খাদ্য-সংকট মোকাবিলা করেছে এবং আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা (যেমন, অঙ্গ প্রতিস্থাপন, কৃত্রিম প্রজনন প্রযুক্তি) মানুষের আয়ুষ্কাল (Life Expectancy) বহুলাংশে বৃদ্ধি করেছে।
৩. বিধ্বংসী প্রযুক্তির হাতছানি – (অভিশাপ পক্ষ)
বিজ্ঞানের অন্ধকারতম দিক হলো এর সামরিকীকরণ ও মারণাস্ত্র তৈরি। ওপেনহাইমারের পারমাণবিক বোমা থেকে শুরু করে আধুনিক রাসায়নিক ও জৈব যুদ্ধাস্ত্র (Chemical and Biological Weapons) মানবজাতিকে আত্ম-ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এনে দাঁড় করিয়েছে।
“আধুনিক বিজ্ঞান মানুষকে দিয়েছে বেগ, কিন্তু কেড়ে নিয়েছে আবেগ। তাতে আছে গতির আনন্দ, নেই যতির আয়েস।” ― বিনয় মুখোপাধ্যায়, যাযাবর৪. প্রকৃতির উপর আগ্রাসন: বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্যহীনতা – (অভিশাপ পক্ষ)
শিল্প বিপ্লব থেকে শুরু করে আজকের অতি-ভোগবাদী জীবনধারা পর্যন্ত, বিজ্ঞানভিত্তিক প্রযুক্তির যথেচ্ছ ব্যবহার পরিবেশের উপর চরম আঘাত হেনেছে। গ্রিনহাউস গ্যাস, জলবায়ু পরিবর্তন (Climate Change), জীববৈচিত্র্যের হ্রাস এবং দূষণ—এগুলি বিজ্ঞানের অনিয়ন্ত্রিত প্রয়োগের ফল।
৫. নৈতিকতার সংকট: বায়ো-এথিক্স এবং ডিজিটাল বিভাজন – (দ্বান্দ্বিক দিক)
জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) এবং রোবোটিক্স-এর মতো নতুন প্রযুক্তিগুলি মানব সমাজের সামনে গভীর নৈতিক ও দার্শনিক প্রশ্ন নিয়ে এসেছে। মানুষ কি ঈশ্বরের ভূমিকায় অবতীর্ণ হচ্ছে? AI যখন মানুষের কর্মসংস্থান ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা কেড়ে নেয়, তখন সমাজের শ্রেণী বিভেদ (Digital Divide) আরও তীব্র হয়।
৬. সমাজ এবং সংস্কৃতির রূপান্তর: এক নতুন বাস্তবতা – (দ্বান্দ্বিক দিক)
যোগাযোগ বিপ্লব (সোশ্যাল মিডিয়া, ইন্টারনেট) পৃথিবীকে ‘গ্লোবাল ভিলেজ’-এ পরিণত করলেও, এটি মানুষের মধ্যে একাকীত্ব এবং মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যাও সৃষ্টি করেছে। বিজ্ঞান আমাদের জীবনযাত্রার গতি বাড়ালেও, ‘সময়’ এবং ‘শান্তি’ হরণ করেছে।
সমাপনী: (উপসংহার) বিবেকের দর্পণে
এসেছে বিজ্ঞান, হাতে দ্বি-ধার তরবারি, সৃষ্টি কি সংহার? এ বার মানব, তুমিই বিচারি।বিজ্ঞানের আলোচনা কখনোই সরল ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’-এর উত্তরে সীমাবদ্ধ থাকতে পারে না। এটি কোনো স্থির সত্য নয়, বরং মানব সভ্যতার নিরন্তর গতিরই প্রতিচ্ছবি।
বিজ্ঞান তার স্বভাবগতভাবে নিরপেক্ষ, কিন্তু যখন তা মানুষের হাতে পড়ে, তখন তা হয় মহৎ উদ্ভাবন অথবা বিধ্বংসী মারণাস্ত্র। প্রশ্নটা বিজ্ঞানকে নিয়ে নয়, প্রশ্নটা তার নিয়ামক মানুষের মন নিয়ে। আশীর্বাদ বা অভিশাপ, এই দুইয়ের মধ্যে কোনটি ফলিত হবে, তা সম্পূর্ণ নির্ভর করে মানবজাতির সম্মিলিত নৈতিক সিদ্ধান্ত, রাজনৈতিক প্রজ্ঞা এবং ব্যক্তিগত বিবেকের উপর।
বিজ্ঞান এক প্রখর দ্বিখণ্ডিত তরবারি — যার তীক্ষ্ণতা দিয়ে আমরা অজ্ঞানতা ও রোগকে ছিন্ন করতে পারি, আবার অসাবধানতাবশত নিজেদের গলায়ও বসাতে পারি। বিজ্ঞানের আশীর্বাদকে ফলপ্রসূ করতে হলে, মানবজাতিকে অবশ্যই তার ধ্বংসাত্মক প্রবৃত্তিগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করে, বিবেকের মন্ত্রে দীক্ষিত হতে হবে।
কোন পথ ধরিব মোরা, আলো নাকি আঁধার টান?
সৃষ্টির মন্ত্রে বিজ্ঞান, এ যে মানুষেরই প্রজ্ঞার অভিযান।★ তথ্যসূত্র অবলম্বনে প্রবন্ধ রচনা
- বিজ্ঞান আশীর্বাদ না অভিশাপ – বাংলা প্রবন্ধ রচনা
- বিজ্ঞান আশীর্বাদ না অভিশাপ রচনা ১০০, ২০০, ৩০০, ৪০০ শব্দে
- Bigyan Ashirbad na Abhishap
- বিজ্ঞান আশীর্বাদ না অভিশাপ pdf download
- বিজ্ঞান আশীর্বাদ না অভিশাপ – মানস মানচিত্র অবলম্বনে প্রবন্ধ রচনা
- বিজ্ঞান আশীর্বাদ না অভিশাপ ক্লাস 10, Class12
** ছাত্র-ছাত্রীদের উদ্দেশ্যে বলা এটা হয়তো তোমাদের জন্য অনেকটাই বড় হয়ে যাবে, পরীক্ষার হলে তোমাদের ১০ নম্বরের জন্য এটা থাকে তো তাও তোমরা আধাঘন্টা সময় ধরে নিতে পারো – তোমরা বাড়িতে প্র্যাকটিস করবে নিজেদের ভাষায় লেখার চেষ্টা করবে, পয়েন্টগুলোকে ফলো করবে তথ্যগুলোকে নেবে, একটু ছোট করে নিজেদের ভাষায় লিখবে।
আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা:
আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ ও টেলিগ্রাম Study গ্রুপে যুক্ত হোন -



